বাংলারভূমি জমির খাজনা আবেদন – অনলাইন পূর্ণাঙ্গ গাইড
ভূমিকা: বাংলারভূমি জমির খাজনা আবেদন কী?
পশ্চিমবঙ্গে জমির উপর প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে সরকারকে খাজনা (Land Revenue) দিতে হয়। আগে এই খাজনা জমা দেওয়ার জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসে যেতে হত। এখন আর অফিসে ভিড় নেই—Banglarbhumi পোর্টাল চালুর ফলে জমির খাজনা আবেদন ও জমা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করা সম্ভব। প্রতিটি অর্থপ্রদান হয় GRIPS (Government Receipt Portal System) এর মাধ্যমে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল রসিদ ডাউনলোড করা যায়।
এই প্রবন্ধে ধাপে ধাপে জানানো হলো কীভাবে অনলাইনে বাংলারভূমি খাজনা আবেদন করবেন, খাজনা পরিশোধ করবেন এবং রসিদ ডাউনলোড করবেন।
কারা বাংলারভূমি খাজনা আবেদন করতে পারবেন?
এই সুবিধা মূলত দুই ধরনের জমির মালিকদের জন্য:
- রায়ত (Rayat) – যাদের নাম খতিয়ান রেকর্ডে নথিভুক্ত আছে।
- অরেকর্ডেড মালিক (Unrecorded Owner) – যাদের জমি আছে কিন্তু এখনও রেকর্ড আপডেট হয়নি।
উভয় ক্ষেত্রেই আবেদন করার আগে Banglarbhumi পোর্টালে লগইন করতে হবে।
খাজনা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য
আবেদন শুরু করার আগে নিম্নলিখিত তথ্য ও কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন:
- খতিয়ান নম্বর ও প্লটের বিবরণ
- জেলা, ব্লক ও মৌজা নাম
- আবেদনকারী বা পরিবারের প্রধানের তথ্য
- জমির ব্যবহার শ্রেণী – কৃষিজমি, আবাসিক বা বাণিজ্যিক
- পূর্বের খাজনার রসিদ (যদি থাকে)

ধাপ ১: বাংলারভূমি অ্যাকাউন্ট তৈরি ও লগইন
- Banglarbhumi সরকারি ওয়েবসাইটে যান।
- নতুন হলে Sign Up → Citizen ক্লিক করে নিবন্ধন সম্পূর্ণ করুন।
- নিবন্ধনের পর আপনার তৈরি করা ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
লগইন না করলে খাজনা আবেদন পরিষেবা ব্যবহার করা যাবে না।
ধাপ ২: বাংলারভূমি খাজনা আবেদন অনলাইনে শুরু করুন
- লগইন করার পর ড্যাশবোর্ড থেকে Citizen Services মেনুতে যান এবং Land Revenue (Khajna) Application অপশন বেছে নিন।
- আপনার জেলা, ব্লক ও মৌজা নির্বাচন করুন।
- আবেদনকারীর তথ্য দিন – সাধারণত জমির দায়িত্বে থাকা পরিবারের প্রধান আবেদনকারী হন।
- খতিয়ান নম্বর প্রদান করুন; সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্লটের তথ্য নিয়ে আসবে।
- প্রতিটি প্লটের জন্য জমির ব্যবহার ধরন নির্বাচন করুন।
- পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তথ্য যোগ করুন (অন্তত একজনকে “Self” হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে)।
- অরেকর্ডেড সম্পত্তি থাকলে তার বিবরণ যোগ করুন।
- পূর্বের খাজনা প্রদানের তথ্য লিখুন এবং রসিদ আপলোড করুন (ঐচ্ছিক)।
- আবেদন জমা দিন। সঙ্গে সঙ্গে একটি আবেদন নম্বর তৈরি হবে।
ধাপ ৩: আবেদন রসিদ ডাউনলোড
আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড করা যাবে যেখানে আপনার আবেদন নম্বর থাকবে।
পথ: Application Download → আবেদন নম্বর দিন → ক্যাপচা → Submit
এই নম্বর ব্যবহার করেই খাজনা ফি জমা দিতে হবে।
ধাপ ৪: GRIPS এর মাধ্যমে খাজনা ফি অনলাইনে প্রদান
- Citizen Services → Fees Payment এ যান।
- Request Type → Revenue (Khajna) নির্বাচন করুন।
- আপনার আবেদন নম্বর ও ক্যাপচা দিন।
- প্রদত্ত ফি বিবরণ যাচাই করুন।
- কনফার্ম করলে সিস্টেম আপনাকে নিয়ে যাবে GRIPS, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমোদিত পেমেন্ট গেটওয়েতে।
- নেট ব্যাংকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড অথবা UPI থেকে যেকোনো মাধ্যম বেছে নিয়ে পেমেন্ট করুন।
- সফলভাবে পেমেন্ট সম্পন্ন হলে একটি GRN (Government Reference Number) তৈরি হবে।
পেমেন্ট সফল হলে Banglarbhumi সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে যাবে।
ধাপ ৫: রসিদ বা আবেদনপত্র পুনর্মুদ্রণ
পেমেন্ট সফল হলে:
- Banglarbhumi পোর্টালের Application/Receipt Reprint অপশনে যান।
- আবেদন নম্বর লিখুন, সঠিক খতিয়ান নির্বাচন করুন এবং সিকিউরিটি কোড দিন।
- এখান থেকে জমা দেওয়া আবেদনপত্র ও খাজনার রসিদ ডাউনলোড করা যাবে।
অন্যদিকে, GRIPS পোর্টালের GRN Status/Challan Search থেকেও রসিদ পুনর্মুদ্রণ করা যায়।
খাজনা আবেদনে সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
- ভুল খতিয়ান তথ্য → আগে “Know Your Property” থেকে যাচাই করুন।
- পেমেন্ট ফেল → টাকা কাটা না গেলে পুনরায় চেষ্টা করুন।
- টাকা কেটে গেছে কিন্তু রসিদ নেই → GRIPS-এ GRN দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করুন।
- ডুপ্লিকেট পেমেন্ট এড়াতে → সর্বদা GRN যাচাই করে নিন।
অফলাইন সহায়তা: বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (BSK)
যদি অনলাইনে সমস্যা হয়, কাছের বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (BSK) থেকে সাহায্য নিতে পারেন। এখানে Banglarbhumi ও GRIPS-এর সব পরিষেবা দেওয়া হয়।
খাজনা বনাম প্রপার্টি ট্যাক্স বনাম স্ট্যাম্প ডিউটি
- খাজনা (Land Revenue): Banglarbhumi ও GRIPS এর মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়।
- প্রপার্টি ট্যাক্স: পৌরসভা বা নগর নিগম কর্তৃক আদায় হয় (OPTICS/UDMA পোর্টালের মাধ্যমে)।
- স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি: জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় WB Registration পোর্টালের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
নিরাপদে খাজনা দেওয়ার টিপস
- শুধুমাত্র সরকারি Banglarbhumi ও GRIPS পোর্টাল ব্যবহার করুন।
- সর্বদা আবেদন নম্বর, GRN ও রসিদ সংরক্ষণ করুন।
- কোনো এজেন্ট বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে পেমেন্ট করবেন না।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন ১: পশ্চিমবঙ্গে অনলাইনে খাজনা দেওয়ার পদ্ধতি কী?
Banglarbhumi-তে লগইন করুন → Fees Payment → Revenue (Khajna) → আবেদন নম্বর দিন → GRIPS-এ পেমেন্ট সম্পূর্ণ করুন → রসিদ ডাউনলোড করুন।
প্রশ্ন ২: খাজনা দেওয়ার জন্য GRIPS কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গে সব খাজনা GRIPS-এর মাধ্যমে জমা হয়।
প্রশ্ন ৩: GRN কী?
GRN (Government Reference Number) হলো প্রতিটি পেমেন্টের জন্য GRIPS দ্বারা তৈরি একটি বিশেষ নম্বর, যা দিয়ে রসিদ ট্র্যাক বা পুনর্মুদ্রণ করা যায়।
প্রশ্ন ৪: খাজনার রসিদ কোথায় পাবো?
Banglarbhumi পোর্টালের Application/Receipt Reprint থেকে বা GRIPS এর Challan Search অপশন থেকে রসিদ ডাউনলোড করা যাবে।
প্রশ্ন ৫: খাজনা আবেদন করতে কি খতিয়ান নম্বর প্রয়োজন?
হ্যাঁ, খতিয়ান নম্বর বাধ্যতামূলক কারণ সিস্টেম এটি ব্যবহার করে জমির তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন ৬: খাজনা কি প্রপার্টি ট্যাক্সের সমান?
না, প্রপার্টি ট্যাক্স পৌর কর আর খাজনা হলো রাজ্য সরকারের ভূমি রাজস্ব।
প্রশ্ন ৭: বাংলা সহায়তা কেন্দ্র থেকে কি খাজনা দেওয়া যায়?
হ্যাঁ, BSK কেন্দ্র থেকে Banglarbhumi ও GRIPS-এর সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংক
উপসংহার
Banglarbhumi খাজনা আবেদন প্রক্রিয়া জমির মালিকদের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন শুধুমাত্র খতিয়ান নম্বর, আবেদন নম্বর ও GRN দিয়ে ঘরে বসেই আবেদন, পেমেন্ট ও রসিদ ডাউনলোড করা সম্ভব।
সরকারি Banglarbhumi ও GRIPS পোর্টাল ব্যবহার করে খাজনা জমা দিলে নিরাপদ, নির্ভুল ও সরকারিভাবে যাচাই করা রসিদ পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।